ডেনমার্ক বর্তমানে গুরুতর শ্রমিক সংকটের মুখোমুখি। এই সংকট মোকাবিলায় দেশটি বৈশ্বিকভাবে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশ গুলোতে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কারণ ডেনমার্কের শ্রমবাজারে বর্তমানে ১ মিলিয়ন জনবল ঘাটতি রয়েছে। আর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, ফলে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি একটি সম্ভাবনা।

যদি আপনার ওয়েটার, ক্লিনার, হাউজকিপার, শেফ, কিচেন হেলপার কিংবা সিকিউরিটি গার্ডের মতো সাধারণ কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তবে ডেনমার্কে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। অন্যদিকে, আইটি ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, নার্স, কিংবা আর্কিটেক্টের মতো উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতা থাকলে আপনার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে ডেনমার্ক ভিসার সাফল্যের হার ১০০%, যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় নজিরবিহীন।

Table of Contents

শ্রমিক সংকটে ডেনমার্ক

ডেনমার্ক বর্তমানে এক বড় শ্রমিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। যা আপনার মতো মানুষের জন্য হতে পারে নতুন জীবনের সম্ভাবনা। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষ জানেন না যে ডেনমার্কের মতো একটি উন্নত দেশ এখন দক্ষ শ্রমিকের অভাবে ভুগছে।

বিশ্ববিখ্যাত সংস্থা Y-axis এর দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরে ডেনমার্কে প্রায় ১ মিলিয়ন শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে ডেনমার্ক সরকার গোটা বিশ্ব থেকে শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত।

ডেনমার্ক সরকারের এই উদ্যোগ শুধু তাদের শ্রমবাজারকে সচল রাখতেই নয়, বরং বহির্বিশ্ব থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করেও দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাই যারা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ, তাদের জন্য ইউরোপের স্বপ্নপূরণ করার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।

ডেনমার্কে কোন কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে?

ডেনমার্ক, ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ, বর্তমানে বিভিন্ন খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন পেশার লোকজনের জন্য কাজের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। তাই এবার আমরা আলোচনা করব, ডেনমার্কে কোন কোন খাতে কাজের সুযোগ রয়েছে এবং এই সুযোগ কীভাবে আপনার জীবনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

ডেনমার্কে মূলত বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে উচ্চ দক্ষতার পেশাগুলোর জন্য রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যারা ওয়েটার, ক্লিনার, হাউজকিপার, শেফ, কিচেন হেলপার, কনস্ট্রাকশন কর্মী, সুপারমার্কেট কর্মচারী, সিকিউরিটি গার্ড, ওয়্যারহাউজ বা প্যাকেজিং কর্মী হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ।

তবে শুধু সাধারণ কাজের ক্ষেত্রেই নয়, যারা উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবী, যেমন আইটি ইঞ্জিনিয়ার, কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার, ডাক্তার, নার্স, প্রজেক্ট ম্যানেজার, ফার্মাসিস্ট, ইলেকট্রিশিয়ান, আইনজীবী বা আর্কিটেক্ট, তাদের জন্যও ডেনমার্কে চাহিদা রয়েছে। এই ধরনের পেশাজীবীরা ডেনমার্কে কাজের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন।

ডেনমার্কে কাজের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বৈধভাবে করতে হবে। এখানে কোনো দালালের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি প্রাসঙ্গিক যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন, তবে সরাসরি ডেনমার্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন।

ডেনমার্কে থাকার খরচ

ডেনমার্ক, যা সারা বিশ্বে তার উচ্চ জীবনমান, উন্নত কর্মপরিবেশ এবং ব্যালান্সড লাইফস্টাইলের জন্য পরিচিত, এখানে থাকা ও কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হয়। দেশটির কর্মসংস্থান পরিবেশ যথেষ্ট আকর্ষণীয় হলেও, এখানকার খরচ এবং কর ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

ডেনমার্ক কাজের ভিসা

ডেনমার্ক কাজের ভিসা

ডেনমার্কে চাকরি করার সময় আপনার আয় থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর কেটে নেওয়া হবে। এই কর ব্যবস্থা দেশটির উন্নত সেবা এবং সামাজিক সুবিধার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ট্যাক্সের হার নির্ভর করে আপনার মাসিক বা বার্ষিক ইনকামের উপর এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকটি ভিজিট করবেন।

তবে, ট্যাক্স ছাড়াও আপনার মাসিক জীবনযাপনের খরচ বিবেচনা করতে হবে। ডেনমার্কের ব্যস্ত নগরজীবনে একটি শেয়ারিং বাসায় থাকার জন্য গড়ে ২০০ ইউরো ব্যয় হতে পারে। এর সাথে খাবারের জন্য ১০০ ইউরো এবং ইলেকট্রিসিটি, পানি ও অন্যান্য বিল মিলে আরো ১০০ ইউরোর মতো খরচ যোগ হবে। এই খরচের হিসাব স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এই খরচ মূলত আপনার জীবনধারা বা লোকেশন অনুযায়ী সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।

ডেনমার্কে চাকরি করে আপনি মাসিক ৮-৯ লাখ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) উপার্জন করতে পারবেন। এই উপার্জনের একটি অংশ ট্যাক্স এবং থাকা-খাওয়ার খরচে ব্যয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে থাকা-খাওয়ার জন্য মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। আর এই খরচের ফলে আপনার মোট উপার্জনের উল্লেখযোগ্য অংশ সঞ্চয়ের জন্য থেকে যাবে, যা ভবিষ্যতের বিনিয়োগ বা ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানো সম্ভব।

আপনি কেন ডেনমার্কে চাকরি করতে যাবেন?

ডেনমার্ক ইউরোপের এমন একটি দেশ, যেখানে চাকরি করার মাধ্যমে আপনি শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, বরং ব্যক্তিগত জীবনযাপনেও উন্নতি করতে পারবেন। এই দেশটির চাকরির বাজার অনেকটাই আকর্ষণীয় এবং এখানে কাজ করলে আপনি একাধিক সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন ডেনমার্কে চাকরি করা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।

উচ্চ বেতন এবং কম ট্যাক্স সুবিধা

অন্যান্য দেশের তুলনায় ডেনমার্কে কাজ করলে আপনি তুলনামূলকভাবে বেশি বেতন পাবেন। আপনার আয় যদি ৬০ লাখ টাকার নিচে থাকে, তবে মাত্র ১৫% ট্যাক্স দিতে হবে, যা অনেক দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম। আর যদি আয় ৬০ লাখের বেশি হয়, তবুও সর্বোচ্চ ট্যাক্স হার ২৫% পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে, যা একটি উন্নত দেশে জীবনযাপনের জন্য বেশ সাশ্রয়ী।

বিলাসবহুল এবং মানসম্পন্ন জীবনযাপন

ডেনমার্কে চাকরি করলে আপনি সুন্দর এবং নিরাপদ পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারবেন। দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো অত্যন্ত উন্নত, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে সুখ ও শান্তি বয়ে আনবে।

কর্মজীবনে ছুটির সুবিধা

ডেনমার্কে কাজের ক্ষেত্রে সরকারি ছুটির পাশাপাশি প্রতি বছর কোম্পানি থেকে ১৭ দিনের অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। যা আপনারব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাদার জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

কর্মঘণ্টার নির্ধারিত সীমা

এই দেশে কর্মক্ষেত্রে দৈনিক কাজের সময় মাত্র ৮ ঘণ্টা নির্ধারিত করা থাকবে। যা আপনার কাজের চাপকে হ্রাস করবে এবং পরিবার বা ব্যক্তিগত সময় কাটানোর সুযোগ বাড়াবে।

রেসিডেন্সি পারমিট

সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, রেসিডেন্সি পারমিট পাওয়ার সুযোগ। ডেনমার্কে যদি আপনি টানা ৫ বছর কাজ করেন, তবে আপনি সেই দেশের রেসিডেন্সি পারমিট পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন। যা আপনাকে স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাস এবং আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করার দ্বার উন্মোচন করবে।

সার্বিকভাবে, ডেনমার্ক একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ এবং কর্মবান্ধব দেশ। এখানকার কাজের পরিবেশ, উচ্চ বেতন, কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং ছুটির সুবিধাগুলো একজন পেশাদারের জীবনে মানসম্মত পরিবর্তন আনবে। তাই, যদি আপনি একটি উন্নত জীবন এবং পেশাগত নিরাপত্তার খোঁজ করেন, তবে ডেনমার্ক হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত গন্তব্য।

দালাল বা এজেন্সি ছাড়াই ডেনমার্ক ভিসা প্রক্রিয়া

বর্তমান সময়ে আপনি ডেনমার্কে কাজ করতে দালাল বা এজেন্সির ঝামেলা এড়িয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। ডেনমার্কের কাজের ভিসার জন্য আবেদন করা একদম সহজ এবং সঠিক নিয়ম মেনে চললে আপনি নিজেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। নিচে ধাপে ধাপে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হলো, যা আপনাকে পুরো প্রক্রিয়া সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।

১. সঠিক ভিসা স্কিম নির্বাচন

ডেনমার্কে কাজের ভিসার বিভিন্ন স্কিম রয়েছে, যেমন পজিটিভ লিস্ট স্কিম বা পে লিমিট স্কিম। আপনার যোগ্যতা এবং কর্মক্ষেত্রের ভিত্তিতে কোন স্কিমটি আপনার জন্য উপযুক্ত, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করবেন। মূলত এটি একটি প্রাথমিক ধাপ, কারণ সঠিক স্কিম নির্বাচন না করলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে।

২. কেস অর্ডার আইডি তৈরি

ডেনিশ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন (SIRI)-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি কেস অর্ডার আইডি তৈরি করবেন। যা আপনার আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটি ছাড়া আপনি পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন না।

৩. আবেদন ফি প্রদান

কেস অর্ডার আইডি তৈরির পর আপনাকে নির্ধারিত আবেদন ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদানের মাধ্যম এবং প্রক্রিয়া SIRI-এর ওয়েবসাইটে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা থাকে। যখন আপনার ফি প্রদান করা নিশ্চিত হবে, তখন আপনার আবেদন কার্যকর হবে।

৪. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত

ডেনমার্ক কাজের ভিসার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। ডকুমেন্ট চেকলিস্টে থাকে আপনার পাসপোর্ট, চুক্তিপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি। তবে কাজের ভিসার ক্ষেত্রে প্রতিটি ডকুমেন্ট নির্ভুল হওয়া জরুরি।

৫. আবেদন জমা

ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার পর SIRI-এর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন জমা দিবেন। যা আপনি নিজে আবেদন করতে পারবেন, অথবা আপনার নিয়োগকর্তাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে আপনার পক্ষে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন।

৬. বায়োমেট্রিক তথ্য জমা

আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্য, যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি জমা দিতে হবে। মনে রাখবেন, এই ধাপটি আবেদন প্রক্রিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

৭. প্রসেসিংয়ের জন্য অপেক্ষা

সবশেষে, আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে SIRI আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার এক থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের সিন্ধান্ত জানা যায়।

এই ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ডেনমার্কের কাজের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। দালাল বা এজেন্সির সাহায্য ছাড়া নিজেই আবেদন করার মাধ্যমে আপনি খরচ সাশ্রয় করতে পারবেন এবং প্রতারণার ঝুঁকি এড়াতে পারবেন। বিশেষ প্রয়োজনে SIRI-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ তথ্য জেনে নিবেন।

ডেনিশ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন (SIRI)

ডেনিশ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন (SIRI) বিদেশী শ্রমিকদের নিয়োগের জন্য যে সমস্ত কোম্পানিকে প্রত্যয়িত করেছে, তাদের একটি সম্পূর্ণ তালিকা নীচে দেখতে পাবেন। SIRI একটি সরকারি সংস্থা, যা ডেনমার্কে বৈদেশিক শ্রমিকদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই সংস্থা বিদেশী কর্মীদের জন্য ফাস্ট-ট্র্যাক স্কিমের আওতায় নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উত্তীর্ণ কোম্পানি গুলোকে প্রত্যয়িত করে থাকে, যাতে তারা বিদেশী শ্রমিকদের নিয়োগ করতে পারে।

ফাস্ট-ট্র্যাক স্কিমটি বিদেশী শ্রমিকদের দ্রুত এবং সহজভাবে ডেনমার্কে কাজের সুযোগ পাওয়ার ব্যবস্থা করে। SIRI প্রত্যয়িত কোম্পানি গুলো এসব প্রক্রিয়াতে অভিজ্ঞ এবং বিশ্বস্ত। তারা শ্রমিকদের নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থান সম্পর্কিত বিধিমালা পালন করে থাকে। এর ফলে, বিদেশী শ্রমিকরা ডেনমার্কে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তাদের অধিকার ও সুবিধা সুরক্ষিত থাকে।

আরও বিস্তারিত জানতে এবং তালিকাটি দেখতে, আপনি এই লিংকে ক্লিক করতে পারেন: SIRI প্রত্যয়িত কোম্পানির তালিকা।

ডেনমার্ক জব সার্চ, আবেদন ও অফার লেটার পাওয়ার নিয়ম

ডেনমার্কে চাকরির জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন হলেও, যদি আপনি সঠিক নিয়ম মেনে চলেন তবে এটি খুবই সহজ হয়ে উঠবে। প্রথমেই আপনাকে সঠিক কোম্পানিগুলো খুঁজে বের করতে হবে যারা SIRI (ডেনমার্কের সরকারি কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠান) দ্বারা প্রত্যয়িত। SIRI প্রত্যয়িত কোম্পানি গুলো ডেনমার্কে কর্মসংস্থান সরবরাহ করে এবং তারা বিদেশি প্রার্থীদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। আপনার জন্য প্রধান কাজ হবে এমন কোম্পানিগুলোর তালিকা নির্বাচন করা, যেগুলো আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সাথে মানানসই।

এরপর, আপনি যে কোম্পানিগুলো নির্বাচন করেছেন, সেগুলোর নাম গুগলে সার্চ করে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, সাইটের নিচের অংশে গিয়ে আপনি তাদের কন্ট্যাক্ট ইমেইল আইডি খুঁজে পাবেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন, যে কোম্পানি গুলো ভেরিফাইড, তাদের ইমেইলের শেষে “.dk” ডোমেইন থাকবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন, কারণ ডেনমার্কের অফিসিয়াল কোম্পানি গুলোর ইমেইল সাধারণত “.dk” দিয়ে শেষ হয়।

এখন, যখন আপনি সঠিক কন্ট্যাক্ট মেইল ঠিকানা পাবেন, তখন আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন রেজ্যুমে, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করে একটি প্রফেশনাল মেইল পাঠাতে হবে। মেইলে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করবেন, কেন আপনি ঐ নির্দিষ্ট পদে আবেদন করছেন এবং আপনি কেন কোম্পানির জন্য উপযুক্ত প্রার্থী।

ডেনমার্কে চাকরি পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনাকে প্রাথমিকভাবে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে এবং তাদের অফার লেটার পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। কোম্পানি যদি আপনার আবেদন গ্রহণ করে এবং আপনার যোগ্যতা তাদের চাহিদার সাথে মিল থাকে, তবে তারা আপনাকে একটি অফার লেটার পাঠাবে। অফার লেটার পাওয়ার পর, আপনি ডেনমার্কের চাকরি পাওয়ার পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন, যা সাধারণত ভিসা প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

এভাবে, আপনি সঠিকভাবে ডেনমার্কে চাকরি খোঁজা, আবেদন করা এবং অফার লেটার পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

ডেনমার্ক জব ভিসা ফি ও প্রসেসিং সময়

আপনাকে অবশ্যই ডেনমার্ক জব ভিসা প্রসেসিং সময় এবং ফি সম্পর্কে জানতে হবে। যদি আপনি ডেনমার্কে কাজ করতে চান, তবে আপনার একটি ওয়ার্ক ভিসা প্রয়োজন হবে। এই ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কারণ  ভিসা প্রসেসিং এর সময় ১ মাস বা তারও বেশি সময় নেয়। এই সময়ের মধ্যে আপনার আবেদন যাচাই করা হবে। আর যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তবে ভিসা দেওয়া হবে।

ডেনমার্ক জব ভিসার ফি হল 6290 ড্যানিশ ক্রোনার (DKK), যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ টাকার মতো। এই ফি পরিশোধ করতে কোনো ধরনের মধ্যস্থকারী বা দালাল এর প্রয়োজন নেই। আপনি সরাসরি ডেনমার্ক সরকারের কাছে এই ফি প্রদান করতে পারবেন। যা একদম স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, যেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই আপনি আপনার ভিসা আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

এখন ডেনমার্কে চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং দালাল ছাড়া সরাসরি আবেদন করা সম্ভব, যা একজন প্রার্থীর জন্য অনেক সুবিধা প্রদান করবে। বর্তমান শ্রমিক সংকটের কারণে ডেনমার্কে ব্যাপক পরিসরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা বিদেশী শ্রমিকদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

এছাড়া, ডেনমার্কের চাকরি ভিসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করলে খুব সহজেই আবেদন করা সম্ভব। আপনার সঠিক যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা থাকলে, আপনি সরাসরি কোম্পানি গুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং দ্রুত অফার লেটার প্রাপ্তির মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। আর সেই লক্ষ্যে আজকের এই আর্টিকেলে ডেনমার্ক ওয়ার্ক ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়েছে।